খুলে দেয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা করতে হবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুখে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। থাকতে হবে সাবানে হাত পরিষ্কারের ব্যবস্থা। স্থানীয়ভাবে থার্মোমিটারের ব্যবস্থাও থাকতে হবে। আগের মতো প্রতিদিন সব বিষয়ের ক্লাস হবে না। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পরে স্কুল খুলে দিলে এমনি বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা প্রতিপালন করতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব নির্দেশনা প্রস্তুত করেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর নির্দেশনাগুলো জারি করা হবে বলে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন যুগান্তরকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড সিভেনশন (সিডিসি) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া স্বাস্থ্যবিধিগুলোকে অনুসরণ করে এসব নির্দেশনার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে তা প্রকাশ করা হবে।
সূত্র জানায়, মোটা দাগে ৭ ধরনের নির্দেশনা প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এগুলোর অধীনে আরও কিছু নির্দেশনা থাকায় সব মিলে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ ডজন। নির্দেশনা বাস্তবায়নে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি (এসএমসি) দায়িত্ব পালন করবে। বাস্তবায়ন করবেন শিক্ষকরা। এছাড়া এগুলোর ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থাও করা হবে।
খসড়া নির্দেশনায় আছে, বিদ্যালয় খোলার সরকারি নির্দেশনা আসার পর নূ্যূনতম ১৫ দিন আগে শিক্ষক, কর্মচারী এবং এসএমসির সদস্যদের উপস্থিতিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ক্লাস উপযোগী করে বিদ্যালয় পরিচ্ছন্ন করে তুলতে হবে। বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। স্কুলের গেটে বা প্রবেশের স্থানে হাত ধোয়ার জন্য সাবান ও পানির ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে প্রবেশ করবে। থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মেপে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করানো হবে।
পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত নির্দেশনায় থাকছে- আগের মতো ক্লাসে এক বেঞ্চে তিন বা চারজন বসতে পারবে না, এক বেঞ্চে দুইজনকে বসাতে হবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আগের মতো আর সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস হবে না। একটি স্তরে সপ্তাহে দুই বা তিন দিন অথবা প্রতিদিন দুই-তিনটি ক্লাস নেয়া হবে। তবে ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণিকে অধিক গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যক্রম নির্বাচন করে কোন দিন কোন বিষয়ের ক্লাস নেয়া হবে তা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও এসএমসির সদস্যদের নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
বিদ্যালয় চলাকালীন সময় সংক্রান্ত নির্দেশনা হচ্ছে- বিদ্যালয়ে আসতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক মুখে মাস্ক পরে আসতে হবে। বিদ্যালয়ে প্রবেশের সময় সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে খেলাধুলা, আড্ডা-গল্প করতে পারবে না। সামাজিক দূরত্ব রেখে হাঁটাচলা করতে হবে। নোটিশ বোর্ডে বিদ্যালয় শিক্ষক, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যোগাযোগ নম্বর লিখে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। কেউ অসুস্থ হলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় তাকে চিকিৎসা দিতে বলা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দিকনির্দেশনাগুলো সবার কাছে পৌঁছে দিতে ফেসবুক, অনলাইন, ওয়েবসাইট, গণমাধ্যমসহ সব মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। এতে করে অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে আগ্রহী হবেন। করোনাকালীন বার্ষিক উন্নয়ন বাবদ অর্থ দিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে নির্দেশ দেয়া হবে।